দৈনন্দিনের রুটিন

দৈনন্দিনের রুটিন
দৈনন্দিনের রুটিন
দারুল ইক্বামা অবস্থানরত প্রত্যেক তালিবুল ইলম, নিম্নোক্ত রুটিন অনুযায়ী চলবে। 
 
১। ফজরের জামাতের পৌনে এক ঘণ্টা পূর্বে ঘুম থেকে জাগ্রত হবে। অতঃপর অযু-ইস্তেঞ্জা সেরে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই এক জিলদ কুরআন শরীফ থাকা আবশ্যক। উন্নতমানের কাপড় দ্বারা কুরআন শরীফের গিলাফের ব্যবস্থা প্রত্যেকেই করে নিবে। 
 
২। প্রতি নামাযের ১০ মিনিট পূর্বে নিজ নিজ রুম ত্যাগ করবে। ৭ মিনিটের মধ্যে মুসল্লায় উপস্থিত হবে। এব্যাপারে প্রত্যেক জামাতের জিম্মাদারগণ সজাগ দৃষ্টি রাখবে। রুম ত্যাগ করার জন্য প্রথমে এলান করবে অতঃপর লাইট ও ফ্যানের সুইচ বন্ধ করে দিবে।  বিদ্যুত না থাকলেও খেয়াল করে সুইচ বন্ধ করে বের হবে। 
 
৩। ফজর নামাযের পর মসজিদে বসেই সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে। অতঃপর রুমে এসে নাস্তা পর্যন্ত সবক ইয়াদ/মুতালাআ করতে থাকবে। 
 
৪। মেশকাত, দাওরা ও তাখাসসুস এর ছাত্ররা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী প্রতিদিন যেকোনো সময়ে ‘কুরআনের হেদায়েত অর্জন’ এর নিয়তে তাদাব্বুরের সাথে নির্ভরযোগ্য কোন তরজমা ও তাফসীর থেকে কমপক্ষে ‘তিন আয়াত’ এর তরজমা ও তাফসীর মুতালাআ করবে। 
 
৫। খানার জিম্মাদারগণ প্রত্যেক বেলা আহার শেষ করে খাবারের পাত্র মাতবাখে জমা দিবে। সকালের নাস্তার ক্ষেত্রে  উস্তাদদের খাদেমগণ ৬.২৫ মিনিটে এবং ছাত্রদের জিম্মাদারগণ ৬.৩০ মিনিটে মাতবাখ থেকে খাবার নিয়ে আসবে এবং ৬.৪০ মিনিটের পূর্বেই ছাত্রদের খাবার পরিবেশন করবে। অন্যান্য ছাত্ররা ৬.৪০ মিনিটে নাস্তার জন্য দস্তরখানে যাবে।
 
৬। ৭.০০ টার মধ্যে নাস্তা শেষ করে দরসগাহে উপস্থিত হবে। দরস শুরু হওয়ার ৫ মিনিট পূর্বে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নিজ নিজ জায়গায় বসে যাবে।  
 
৭। ৭.০৫ মিনিট হতে ৪০মি. করে ১১.৪৫ মিনিট পর্যন্ত যথারীতি ৭টি দরস হবে। প্রত্যেক ছাত্রকে অবশ্যই পায়জামা পরিধান করে দরস করতে হবে। 
 
৮। ১১.৪৫ মিনিট হতে একটা দশ মিনিট পর্যন্ত সকলের জন্য ঘুম বাধ্যতামূলক। এ সময় দরসে উপস্থিতির মতই সকলের ঘুমানো অপরিহার্য। এক্ষেত্রে কোন প্রকার শীথিলতা কাম্য নয়।
 
৯। সকল বিভাগের ছাত্ররা ১.১০ মিনিটে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে ১.৩০ মিনিটের মধ্যে গোসল সম্পন্ন করবে।  
 
১০। ১.৩৫ মিনিটে সকল ছাত্র জোহরের নামাজের জন্য নামাযের মুসল্লায় উপস্থিত হবে। এক্ষেত্রে ঘুম থেকে উঠতে বিলম্ব করা যাবে না এবং কোন কারণেই যেন কারো মাসবুক না হতে হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। 
 
১১। দুপুরের খাবারের জন্য খাবারের পাত্র ঘুমানোর পূর্বে মাতবাখে জমা দিবে। জোহরের নামাযের পর সাথে সাথে খাবার নিয়ে আসবে। ২.৩০ মিনিটের মধ্যে খাবার শেষ করে ২.৩৫ থেকে অবশ্যই তাকরার শুরু করবে।  তাকরার শেষে সবক ইয়াদ, হাতের লেখা ও মুতালাআয় ব্যস্ত থাকবে। 
 
১২। পড়ার সময় বিশেষত জোহর থেকে আছর পর্যন্ত পড়া ব্যতীত অন্য কোন কাজ যেমন ঘুমানো, কাপড় ধোয়া, গোসল ইত্যাদি করা যাবে না। অসুস্থার কারণে বিশ্রামের প্রয়োজন হলে নেগরান উস্তাদ থেকে ছুটি নিয়ে বিশ্রাম করবে। এ সময় বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে নেগরান উস্তাদ হতে রিপোর্ট বইয়ের মাধ্যমে লিখিত অনুমতি নিয়ে যাবে। 
 
১৩। আছরের পর খতমে খাজেগান ও দুআর সময় সকলের উপস্থিতি অপরিহার্য । বিনা কারণে অনুপস্থিত থাকলে কিংবা দুআ শেষ হওয়ার পূর্বে চলে আসলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হবে।
 
১৪। দুআর পর থেকে মাগরিবের  পূর্ব পর্যন্ত প্রত্যেকেই নিজের প্রয়োজন তথা কেনাকাটা ও নাস্তা ইত্যাদি সেরে নিবে। আছরের পর (আবাসিক এলাকার বাহিরে) কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করবে। এক্ষেত্রে এতটুকু দূরে যাওয়া যাবে যেন মাগরিবের আযানের ১০ মিনিট পূর্বেই মুসল্লায় উপস্থিত থাকা যায়। মাগরিবের আযানের কমপক্ষে ১০ মি. পূর্বে নামাযের মুসল্লায় উপস্থিত হয়ে আযান  পর্যন্ত দু’আ ও মুনাজাতে মশগুল থাকবে।
 
১৫। মাগরিবের পূর্বেই রাতের খাবারের পাত্র মাতবাখে জমা  দিয়ে দিবে।
 
১৬। সুন্নতসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায নামাযের নিধার্রিত মুসল্লায় আদায় করবে। বিনা কারণে এর ব্যতিক্রম হলে তা কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হবে।                                                     
 
১৭। মাগরিবের আযানের পর থেকে নিয়ে ২৫ মিনিটের মধ্যে নামায শেষ করে সকলেই পড়তে বসবে। এসময়ে পড়া ব্যতীত অন্য কোন কাজে লিপ্ত থাকা অপরাধ সাব্যস্ত হবে।  
 
১৮। বাদ মাগরিব সকল ছাত্র সূরা ওয়াকি‘আ পাঠ করবে। এরপর অন্য পড়া শুরু করবে। 
 
১৯। ৮.৩০ পর্যন্ত লাগাতার কিতাব পড়া-লিখার মধ্যে মশগুল থাকবে অত:পর খানা খাওয়ার প্রস্তুতি নিবে এবং ৮.৫০ এর মধ্যে খানা খেয়ে মুসল্লায় বসে জিকির ও কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল হয়ে যাবে, ৯.০০ টায় ইশার জামাত আরম্ভ হবে।  
 
২০। কুরআন তিলাওয়াত শুরু হবে এশার জামাত শুরু হওয়ার ২৫ মিনিট পর এবং তা ২০ মিনিট পর্যন্ত চলবে। অতঃপর হিফযের মজলিসও চলবে ২০মিনিট পর্যন্ত । মজলিস শেষে  পড়তে বসবে। 
 
২১। প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল জামাতের ছাত্ররা মাগরিবের পর থেকে রাত ১১.০০টা পর্যন্ত এবং পরদিন ফজরের পর থেকে সকাল ৮.০০টা পর্যন্ত  সাপ্তাহিক তাকরার করবে। তাকরার শেষ হয়ে গেলে নিজের সবক ইয়াদ ও মুতালাআয় লিপ্ত  থাকবে।  
 
২২। মারকাযের বর্তমান ভবনটি স্থান সংকুলানে অপর্যাপ্ত হওয়ায় সকল তালিবুল ইলম মারকায কতৃর্ক নিধার্রিত বেডিং ব্যবহার করবে এবং ব্যবহার শেষে নিধার্রিত বাক্সে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখবে। কারো জন্যই তোশক ব্যবহারের অনুমতি নেই। 
 
২৩। প্রতি ইংরেজী মাসের ১ম শুক্রবার মাসিক শবগুজারী এর বয়ানে  মারকাযের সকল ছাত্রদের বিশেষ করে দাওরা ও তাখাসসুসের ছাত্রদের  উপস্থিত থাকা  অপরিহার্য । 
 
২৪। রাত ১০.৩০ মিনিট থেকে ফজরের জামাতের পৌনে এক ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত ঘুম। তবে কেউ রাত্রে এর অতিরিক্ত পড়তে চাইলে নেগরানের অনুমতিক্রমে সবোর্চ্চে ১১.৩০ মি. পর্যন্ত পড়তে পারবে।        
 
২৫। সকলেই আল্লাহ তাআলার নিকট রোনাজারী ও কান্নাকাটিতে অভ্যস্থ হওয়ার চেষ্টা  করবে। দৈনন্দিন কমপক্ষে একবার হলেও ১০ মিনিট একাগ্রচিত্তে দুআ করবে। এমনিভাবে অল্প অল্প করে হলেও তাহাজ্জুদ, আউওয়াবীন ও অন্যান্য নফল নামায এবং দান—সদকার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। 
 
২৬। দায়েমী হাজিরী অথ্যার্ৎ কোন ছাত্র পূর্ণ শিক্ষাবর্ষ প্রতিটি হাজিরায় উপস্থিত থাকলে মাদরাসার পক্ষ থেকে তাকে বছরের শেষে পুরস্কৃত করা হবে। 
 
২৭। পূর্ণ শিক্ষাবর্ষ কেউ যদি তাকবীরে উলার সাথে নামায আদায় করে তাহলে তাকেও মাদরাসার পক্ষ থেকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হবে।
arrow_upward